অম্ল মাটিতে ভালো ফসল হয় না। তাই অম্ল মাটি সংশোধন করা খুবই দরকার। অম্ল সংশোধনের উপায় গুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
অম্লীয় মাটি সংশোধন বা মাটির অম্লতা দূরীকরণের উপায়
Reclamation of Acid Soil
বিভিন্ন কৌশল ও পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে মাটির অম্লতা হ্রাস করা সম্ভব। অম্লতা সংশোধনের জন্য যে সমস্ত পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, তাদের মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো অন্যতম :
১। চুন ব্যবহার করে: জমির অম্লতা কমানোর জন্য চুন একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। কারণ রাসায়নিক সারের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে মাটিতে অম্লত্ব সৃষ্টি হয়। চুন প্রয়োগের ফলে মাটিতে H+ এর পরিমাণ কমে এবং OH- এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে অম্লতা হ্রাস পায়।
মৃত্তিকায় ব্যবহার উপযোগী চুন দ্রব্যগুলো হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বনেট (CaCO₃), ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO) ও ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Ca(OH)₂। মাটিতে চুন প্রয়োগ করা হলে ক্যালসিয়াম যোগায়ন হাইড্রোজেন যোগায়নকে প্রতিস্থাপিত করে মাটির অম্লমান (pH) বৃদ্ধি করে।
H কলোয়েড মাইসেলি H+ + CaCO₃ Ca কলোয়েড মাইসেলি Ca + H₂O + CO₂
H+ আয়ন OH- আয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পানিতে পরিণত হয় এবং ক্রমে মৃত্তিকা কলোয়েড থেকে H+ আয়নের প্রাধান্য লোপ পেয়ে মৃত্তিকার অম্লত্ব হ্রাস পায়। চুন মাটিতে গুঁড়া করে এবং বেশ কিছুদিন পানিতে ভিজিয়ে রেখে পরে জমিতে ব্যবহার করা উচিত।
২। জৈবসার ব্যবহার: মাটিতে বিভিন্ন প্রকার জৈবসার যেমন- গোবর, কম্পোস্ট, সবুজ সার, অণুজীব সার, ট্রাইকোডার্মা, জৈব বালাইনাশক (বায়োপেস্টিসাইড) ইত্যাদি প্রয়োগ করলে উৎপন্ন জৈব এসিডসমূহ মাটির বাফার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অর্থাৎ মাটির একটি নির্দিষ্ট অম্লমান স্থির রাখতে সহায়তা করে। ফলে মাটির অম্লত্ব হ্রাস পায়। বিভিন্ন জৈব সারের ব্যবহারগুলো নিম্নরূপ:
(ক) বায়োফার্টিলাইজার (অণুজীব সার) ব্যবহার: বিভিন্ন প্রকার অণুজীব সার, যেমন- রাইযোবিয়াম, নীল সবুজ শৈবাল, এ্যাজোলা ইত্যাদি অম্লীয় মাটিতে প্রয়োগ করা হলে উক্ত অণুজীবসমূহ মাটিতে বিদ্যমান জৈবপদার্থকে নিঃশেষ করতে বাধা প্রদান করে, ফলে মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে হিউমাস উৎপন্ন হয়ে অম্লমাটির অম্লত্ব কমে।
(খ) ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার: ট্রাইকোডার্মা এক প্রকার মুক্তজীবী ছত্রাক যা উদ্ভিদের শিকড়স্থ মাটি, পচা আবর্জনা, কম্পোস্ট ইত্যাদিতে অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। ট্রাইকোডার্মার সাসপেনশন ব্যবহার করে প্রস্তুতকৃত ট্রাইকো কম্পোস্ট অম্লীয় মাটিতে ব্যবহার করলে গভীরতম স্তর পর্যন্ত তা মাটিকে সংশোধন করে ট্রাইকো কম্পোস্ট ব্যবহারের ফলে মাটিতে হিউমাস উৎপন্ন হয় এবং মাটির বাফার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে অম্ল মাটি নিরপেক্ষ অবস্থায় উন্নীত হয়।
৩। সবুজ সার ব্যবহার করে: মাটির গুণাগুণ উন্নয়নের জন্য সিমজাতীয় উদ্ভিদ চাষ করে ফুল আসার পূর্বে চাষ দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে যে সার তৈরি করা হয় তাকে সবুজ সার বলে। সবুজ সার এক ধরনের উত্তম জৈবসার। অম্ল প্রধান মাটিতে বরবটি, ধৈঞ্চা, শনপাট ইত্যাদি সবুজ সারজাতীয় উদ্ভিদ চাষ করে ফুল আসার আগে আগে সেগুলো চাষ দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে সেচ দিলে গাছ পচে মাটিতে জৈব সারের কাজ করে। এ জৈবসার মাটির ফার্নের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে মৃত্তিকা দ্রবণ থেকে H+কে সরিয়ে মৃত্তিকার অম্লতার মাত্রাকে কমিয়ে দেয়।
৪। সুষম সারের ব্যবহার: ফসলের জমিতে ইচ্ছামতো ভারসাম্যহীনভাবে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে, বিভিন্ন সারের সমন্বয় ঘটিয়ে সুষম সার প্রয়োগ করা হলে মাটির অম্লতার সম্ভাবনা কমে যায়।
৫। সেচের পানির মান উন্নয়ন: সেচের পানিতে আয়নাব (Fe), অ্যালুমিনিয়াম (Al) প্রভৃতি খনিজ লবণ থাকলে জমিতে অম্লতা বেড়ে যায়। সুতরাং সেচের পানি প্রয়োগ করার পূর্বে পানির গুণগত মান পরীক্ষা সারের সম্ভব হলে Fe এবং Al মুক্ত পানি ব্যবহার করা উচিত।
৬। অম্লীয় সারের ব্যবহার কমানো: যে সকল সার মাটিতে অম্ল সৃষ্টি করে সে সকল সারের ব্যবহার কমিয়ে এ সারের বিকল্প সার ব্যবহার করলে মাটির অম্লত্ব কমে যাবে। যেমন- অম্লসৃষ্ট অ্যামোনিয়াম সালফেট সারের ব্যবহার বন্ধ করে সোডিয়াম নাইট্রেট-যুক্ত সার ব্যবহার করতে হবে।
৭। কাঠের ছাই প্রয়োগ: জ্বালানি কাঠের ছাই মাটিতে প্রয়োগ করলে অম্লত্ব অনেকংশে কমে যায়। কাঠের ছাইয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম কার্বনেট বিদ্যমান থাকায় মৃত্তিকার অম্লত্ব দূর হয়।
Post a Comment