লোড হচ্ছে...

কয়েকটি উন্নত জাতের গরুর পরিচিতি

 মোঃ আব্দুল্লাহ ফারাজী

প্রভাষক,  ইতনা স্কুল এন্ড কলেজ। 

কয়েকটি উন্নত জাতের গরুর পরিচিতি ঃ

১. শাহিওয়াল গরু(Sahiwal variety)


শাহিওয়াল পাকিস্তানের একটি দুধাল জাতের গরু। বর্তমানে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতসহ বিশ্বের মহুদেশে এজাতের গরুপালিত হয়।

ধীর ও শান্ত প্রকৃতির। মােটাসােটা ভারী দেহ। ত্বক পাতলা ও শিথিল।

পা ছােট, ছােট ও পুরু শিং নড়ে। মাথা চওড়া ও পােল উঁচু। কান ঝুলানাে ও কানের ভিতর কালাে দাগ থাকে।

লেজ বেশ লম্বা, প্রায় মাটি ছুঁয়ে যায়। লেজের আগায় দর্শনীয় এক গােছা কালাে লােম থাকে।

সাধারণত এই জাতের গরুর দেহের রং ফ্যাকাশে লাল। তবে কখনও কখনও গাঢ় লাল বা লালের মাঝে। সাদা ও কালাে ছাপযুক্ত হয়।

গাভীর ওলান বড়, চওড়া, নরম ও মেদহীন। লম্বা মােটা ও সমান আকৃতির বাট। দুগ্ধ শিরা বেশ স্পষ্ট যা দূর থেকেও বােঝা যায়।

এজাতের একটি গাভী গ্রামীণ অবস্থায় পালনে ৩০০ দিন দুগ্ধ দানকালে প্রায় ২১৫০ লিটার এবং ফার্মে পালনে প্রায় ৪-৫ হাজার লিটার দুধ দেয়।

ষাঁড়ের দৈহিক ওজন প্রায় ৫২২ কেজি এবং গাভীল ওজন প্রায় ৩৪০ কেজি হয়ে থাকে। 

২. সিন্ধি (Sindhi)


পাকিস্তানের সিন্ধু এলাকায় এজাতের গরুর আদি বাসস্থান। বর্তমানের বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এজাতটি পালিত হয়।

সাধারণত গাঢ় লাল ও চকলেট বর্ণের হয়ে থাকে। গাভী অপেক্ষা ষাঁড়ের রং বেশী গাঢ় হয়।

আকৃতি মাঝারি, সুডৌল,বলিষ্ট ও দেহ আটসাট। গাভীকে শান্তশিষ্ট ও বুদ্ধিদীপ্ত দেখায়।

ভোঁতা শিং যা পাশে ও পিছনে বাঁকানাে থাকে। মাথা ও মুখ মণ্ডল ছােট। চওড়া কপাল। কপালের মাঝের অংশ কিছুটা উঁচু।

ষাঁড়ের চূড়া বেশ উঁচু গল কম্বল বৃহদাকার ও ভাঁজযুক্ত। নাভি চর্ম বড় ও ঝুলন্ত। ষাঁড়ের ওজন প্রায় ৪৫০

গাভীর ওলানের গঠন বেশ সুন্দর ও সামাঞ্জস্যপূর্ণ। ওজন প্রায় ২৯৫ কেজি। প্রতি বিয়ানে সর্বোচ্চ। ৫,৪৪৩ লিটার পর্যন্ত দুধ দেয়। এজাতের বলদ দিয়ে কৃষি কাজ করা যায়।


 

৩. জার্সি (Jersey)


প্রায় ৫০০ বছর ধরে ইংলিশ চ্যানেলের জার্সি দ্বীপে জার্সি জাতের গরুর প্রজনন হয়ে আসছে পরিকল্পিত প্রজননের ফলে জার্সি প্রসিদ্ধ দুধাল জাত হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

লম্বা দেহ, খাটো পা এবং চূড়া হতে কোমর পর্যন্ত পিঠ একদম সােজা থাকে।

বিভিন্ন রংয়ের হয়। তবে প্রধানত হালকা লালচে বাদামী রং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।

 চওড়া জোড়া ডিশযুক্ত কপাল। শিং পাতলা ও সামনের দিকে কিছুটা বাঁকানাে থাকে।

মুখবন্ধনী বা মাজেল কালাে ও চকচকে হয়।

জার্সি জাতের গাভী বাংলাদেশের আবহাওয়ায় পালনে উপযােগী।

এজাতের গাভীর শারিরীক গঠন ছােট হওয়ায খাদ্যের পরিমাণ কম লাগে কিন্ত দুধ উৎপাদন ঠিকই হয়।

গাভী ভীতু প্রকৃতির কিন্তু ষাঁড় কিছুটা অবাধ্য স্বভাবের। গাভী মাঝারী আকৃতির এবং ওজন প্রায় ৩৯০কেজি হয়ে থাকে।

গাভীর ওলান চমক্কার। ইংল্যাণ্ডের একটি জার্সি গাভী এক বিয়ানে ২৫০০-৫০০০ লিটার দুধ দেয়।

৪. হলস্টিন (Halstein)


হলস্টিন গরুর উৎপত্তি হল্যাণ্ড বা নেদারল্যাণ্ড। এজাতের গরুকে পূর্বে হলস্তিন-ফ্রিজিয়ান বলা হত। বর্তমানে

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে এজাতের গরুদুধাল জাত হিসেবে পালন করা হয়।

 হলস্টিন গরুর বর্ণ ছােট বড় কালাে সাদা ছাপযু। তবে পায়ের নিাংশ(হাটুর নীচে) সাধারণত সাদা হয়।

এজাতের গরুর মাথা লম্বাটে ও সােজা হয়। চওড়া মাজেল ও খােলা নস্ক্রিল থাকে। অন্যান্য জাতের গরুর ন্যায় এদরে পিঠ চুড়া থাকেনা।

এজাতের গাভী শান্ত স্বভাবের তবে ষড় উগ্র স্বভাবের হয়। গাভীল ওজন প্রায় ৭৫০কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন প্রায় ১০০০কেজি।

একটি হলস্তিন জাতের গাভীর দুধ দিনে তিনবার দোহন করে এক বিয়ানে প্রায় ১৯.৯৯৫ লিটার দুধ পাওয়া যায়।

৫. হারিয়ানা (Hariana)

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে এজাতের গরুর আদি বাসস্থান বলে স্থানের নামানুসারে নাম করণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে এজাতের গরুপালিত হয়। এটি একটি দ্বৈত উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত জাতের গরু।

দেহের গঠন বলিষ্ট ও আঁটসাট। লম্বা গরু পা বিশিষ্ট এজাতের গরুউচ্চতায় বেশ লম্বা হয়।

মাথা ও মুখ লম্বা ও গরু। গলা লম্বা কপাল চ্যাপ্টা, চোখ বড় বড় ও উজ্জল। শিং ছােট ও গ্যা উপর দিকে উঠানাে থাকে।

মাথার পােল মধ্যস্থ অস্থি বেশ উন্নত। দেহের তলনায় লেজ ছােট ও গরু। গাভীর ওলান সামনে পিছনে প্রশস্থ। সামনের বাট পিছনের বাট অপেক্ষা লম্বা।

এজাতের গরুকৃষি কাজ বা ভারবহন ও দুধের জন্য বেশ উপযােগী।

একটি গাভী প্রতি বিয়ানে প্রায় ১৪০০ লিটার দুধ দেয়

৬. সংকর জাত (Cross bred)


দেশী জাতের গাভীর সাথে বিদেশী জাতের ষাঁড়ের সিমেন দিয়ে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে সংকর জাতের গরুউৎপাদন করা হয়। আমাদের দেশে প্রধানত হলস্টিন,জার্সি, শাহিওয়াল, সিন্ধি জাতের ষাঁড়ের সিমেন কৃত্রিম প্রজননে প্রয়ােগ করে সংকর জাতের গরুউৎপাদন করা হয়। সংকর জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য তার জাত দ্বয়ের সংমিশ্রণে হয়ে থাকে। তাই সংকর জাতের গরুদেশী অপেক্ষা আকারে হয় এবং বেশী দুধ দেয়। একটি পূর্ণ বয়স্ক জাতের গাভীর ওজন ২০০-৩০০কেজি হয়ে থাকে। বিদেশী উন্নত জাতের গরু অনেক সময় আমাদের দেশের আবহাওয়ায় পালনের উপযােগী হয় না। কিন্তু সংকর জাতের পালন আমাদের দেশের জন্য বেশী উপযােগী তাই বাংলাদেশে পালনের জন্য সংকর জাতের গরুউৎপাদনের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে

এজাতের গরুর মাথা লম্বাটে ও সােজা হয়। চওড়া মাজেল ও খােলা নস্ক্রিল থাকে। অন্যান্য জাতের গরুর ন্যায় এদরে পিঠ চুড়া থাকেনা।

এজাতের গাভী শান্ত স্বভাবের তবে ষড় উগ্র স্বভাবে

র হয়। গাভীল ওজন প্রায় ৭৫০কেজি এবং ষাঁড়ের ওজন প্রায় ১০০০কেজি।

একটি হলস্তিন জাতের গাভীর দুধ দিনে তিনবার দোহন করে এক বিয়ানে প্রায় ১৯.৯৯৫ লিটার দুধ পাওয়া যায়।


Post a Comment

Previous Post Next Post