লোড হচ্ছে...

গবাদিপশুর/প্রাণীর রোগ নির্ণয় পদ্ধতি। Methods of Disease Diagnosis in Animal.

গবাদিপশু/প্রাণীর রোগ নির্ণয় পদ্ধতি

প্রাণির রোগ নির্ণয় পদ্ধতি

MEHTODS OF DISEASE DIAGNOSIS IN ANIMAL

অসুস্থ প্রাণিতে সুস্থ প্রাণির স্বাভাবিক লক্ষণগুলোর পরিবর্তন ঘটে এবং রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রাণিকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। অসুস্থতা নির্ণয় করার পূর্বে অবশ্যই সুস্থ প্রাণির বাহ্যিক লক্ষণ জানতে হবে।

গৃহপালিত প্রাণি সুস্থ নাকি অসুস্থ এটা বুঝতে হলে নিম্নবর্ণিত বৈশিষ্ট্যাবলী গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। গবাদিপ্রাণি সুস্থ বা অসুস্থ এটা বোঝার উপায় হলো:

সুস্থ পশুর বৈশিষ্ট্য (Signs of good health in animal)

  • পারিপার্শ্বিক অবস্থায় প্রাণিটি সজাগ থাকবে অর্থ্যাৎ প্রাণির নিকট কেউ আসলে বা শব্দ হলে সেই মূহুর্তে দৃষ্টি দিয়ে বা কান খাড়া করে সাড়া দিবে।
  • শরীরের পশম মসৃণ ও তেলতেলে থাকবে অর্থাৎ প্রাণির শরীরের লোম উজ্জল, মসৃণ ও চকচকে থাকবে।
  • প্রাণির নাকের অগ্রভাগে ভেজা ও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমবে ও চকচকে হবে।
  • নাক, মুখ, চোখ ও কান পরিষ্কার থাকবে।
  • সব সময় লেজ ও কান নাড়াচাড়া করবে।
  • প্রাণি স্বাভাবিক ভাবে মশা-মাছি, ড্যাশ ইত্যাদি লেজ ও মুখের সাহায্যে তাড়াবে।
  • প্রাণি স্বাভাবিক নড়াচাড়া করবে।
  • প্রাণির শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে।
  • শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।
  • খাওয়া দাওয়ার রুচি থাকবে।
  • পিপাসা স্বাভাবিক থাকবে।
  • প্রাণি দিনে ৭/৮ বার জাবর কাটবে।
  • পায়খানা-প্রস্রাব স্বাভাবিক থাকবে এবং সঠিক রং থাকবে।

উপরে একটি সুস্থ প্রাণির স্বাভাবিক লক্ষণ উল্লেখ করা হয়েছে। কোন প্রাণির দেহে বা আচরণে উপরে বর্ণিত এসব লক্ষণের কোন ব্যতিক্রম দেখলে বুঝতে হবে প্রাণি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তখন রোগ নির্ণয় করার পর চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হয়। রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি প্রয়োজন হয়।

রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি (Method of Disease Diagnosis)

রোগ নির্ণয় পদ্ধতি প্রধানত দুই ভাবে করা যায়।

  1. রোগাক্রান্ত প্রাণির ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা
  2. গবেষণাগারে নমুনা পরীক্ষা।
১। রোগাক্রান্ত প্রাণির ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিম্নে বর্ণিত পদক্ষেপ নিতে হয়
১. রোগের ইতিহাস জানা (To Know History of Disease)

ভেটেরিনারি চিকিৎসায় ডাক্তারকে রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগের ইতিহাস জানা অত্যাবশ্যক। কারণ প্রাণি কথা বলতে পারে না। তাই রোগের ইতিহাস হিসেবে অসুস্থ প্রাণির নিম্নে বর্ণিত তথ্য প্রাণি মালিক/প্রাণির পরিচর্যাকারীর নিকট হতে জানতে হবে।

  1. (১) কোন প্রজাতির প্রাণি?
  2. গরু ছাগল, মহিষ অথবা ঘোড়া- কারণ সব রোগ সকল প্রজাতির হয় না। যেমন- ক্ষুরা রোগ গরুর, ছাগল, মহিষের হয় ঘোড়ার হয় না।

  3. (২) প্রাণির বয়স কত?
  4. কারণ সব রোগ সকল বয়সের প্রাণিতে হয় না- যেমন বাছুর গরুর Calf diphtheria হয় এবং বড় গরুতে এ রোগ হয় না।

  5. (৩) লিঙ্গ কি? অনেক রোগ স্ত্রী প্রাণিতে হয়, পুরুষ প্রাণিতে হয় না। আবার পুরুষ প্রাণিতে হয় স্ত্রী প্রাণিতে হয় না।
  6. (৪) কোন জাতের প্রাণি?
  7. কারণ সকল রোগ সব জাতের প্রাণিতে হয় না।

  8. (৫) কোন দিন/ কখন থেকে রোগের লক্ষন দেখা গেছে?
  9. (৬) প্রাণি পানি ও খাবার স্বাভাবিক খাচ্ছে কিনা?
  10. (৭) প্রাণি ঠিকমত জাবর কাটছে কিনা?
  11. (৮) প্রাণি স্বাভাবিক পায়খানা প্রস্রাব করছে কিনা?
  12. (৯) ফার্মের অন্য কোন প্রাণি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে কিনা?
  13. (১০) প্রাণিটি পূর্বে কখনো এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিল কিনা?
  14. (১১) কোন চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে কিনা? চিকিৎসা করা হলে কী কী চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে?
  15. (১২) পায়খানা প্রস্রাবের রং কেমন?
  16. (১৩) প্রাণির আনুমানিক ওজন কত?
  17. (১৪) প্রাণি কোথা থেকে নেয়া হয়েছিল?
  18. (১৫) প্রাণিকে কোন টিকা দেয়া হয়েছিল কিনা?
  19. (১৬) ঐ এলাকায় অন্য প্রাণির হয়েছিল কিনা?

    (১৭) চিকিৎসা দেয়া হলে কি ধরণের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে?

    (১৮) আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার কত?

    (১৯) বর্তমানে প্রাণির অসুবিধা কি ইত্যাদি।

    ২. অসুস্থ প্রাণি পর্যবেক্ষণ

    রোগ নির্ণয়ের জন্য রুগ্ন প্রাণিকে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। প্রাণিকে পর্যবেক্ষণ করে প্রাণির-

    • (ক) প্রাণির বাহ্যিক অবস্থা কেমন?
    • (খ) প্রাণির আচরণ।
    • (গ) দেহের ভঙ্গি যেমন-দাঁড়ানো, শোয়া বা চলার ভঙ্গি এবং
    • (ঘ) প্রাণির মুখ, নাক, চোখ হতে শ্লেষ্মা ঝরে পড়া প্রভৃতি লক্ষণ গুলো পরীক্ষা করতে হবে।

    ৩. প্রাণির দেহ পরীক্ষা (Examination of Animal Body)

    প্রাণির দেহ বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করা যায়, যা নিম্নে আলোচনা করা হলো।

    (ক) ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা (Clinical examination)

    প্রাণির রোগ নির্ণয় করার জন্য হাতে-কলমে যে সব ক্লিনিক্যালি করা হয় তা বর্ণনা করা হলো:

    i) শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় (Determination of body temperature)

    প্রাণির রোগ নির্ণয়ের জন্য শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয় একটি গুরুত্বপূর্ণ পন্থা যা রোগ নির্ণয়ে সহজ হয়। প্রাণির সংক্রামক রোগে ও আঘাতজনিত কারণে প্রাণি জ্বরে আক্রান্ত হয়। জ্বর হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য মানুষের যেমন কপালে হাত দিয়ে কিছুটা বোঝা যায় প্রাণির কানের গোড়ায় হাত দিয়েও জ্বরের আন্দাজ করা যায়। তবে প্রকৃত জ্বর নির্ণয় করার জন্য ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটার ব্যবহার করা উত্তম পদ্ধতি।

    গৃহপালিত প্রাণির অনেক রোগ আছে যে রোগ হলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেড়ে যায় যেমনঃ সংক্রামক রোগ। আবার অনেক রোগের আক্রমণে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থেকে কমে যায় যেমনঃ কীটনাশক দ্বারা বিষক্রিয়া, Impaction, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদি। প্রাণির স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিম্নবর্ণিত কারণে বৃদ্ধি পায়: গরমের দিনে, গর্ভকালে, Heat আসলে, পরিশ্রম বেশি করলে, কাজ করালে, আবহাওয়া Change হলে। রুগ্ন প্রাণির তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্য, মানুষের দেহের তাপমাত্রা নির্ণয়ের জন্য যে থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয় সেই একই থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়।

Post a Comment

Previous Post Next Post