দানা জাতীয় শস্য:
দানা জাতীয় শস্য বলতে পুষ্টি শর্করা সমৃদ্ধ খাদ্যের জন্য উৎপন্ন তৃণ জাতীয় উদ্ভিদকে বোঝায়। দানা জাতীয় ফসলের বীজ সাধারণত নগ্ন প্রকৃতির এবং শর্করা সমৃদ্ধ হয়। এ ফসল প্রধানত খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং গ্রামিনী পরিবেশের অন্তর্গত। দানা জাতীয় ফসলের মধ্যে ধান অন্যতম এবং মোট জমির ৮০ থেকে ৮৫ পার্সেন্ট জমিতে ধান চাষ হতে দেওয়া যায়।
দানা জাতীয় ফসলের বৈশিষ্ট্য:
১. মাঠে ব্যাপকভাবে চাষ করে প্রচুর পরিমাণে জন্মানো হয়।
২. এতে প্রচুর শর্করা থাকে এবং বেশিরভাগ গ্রামীণই পরিবার ভুক্ত
আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষ পদ্ধতি:
বীজহার: আমন বোরর চারা উৎপাদনের জন্য পতি বর্গ কিলোমিটার কাদাময় বীজতলায় ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম বীজ বপন করতে হয় ।
অর্থাৎ প্রতি শতক বা শতাংশ ৪০ বর্গ মিটার বীজতলার তিন থেকে চার কেজি বীজ বপন করতে হয়। এই বীজ তলার উৎপাদিত চারা দিয়ে ৪০ শতক জমিতে চারা রোপণ করা যায় । বোনা আউশ ও আমন ধান চাষের জন্য বীজ ছিটিয়ে প্রতি হেক্টর ৭৫ থেকে ১০০ কেজি এবং সারি পদ্ধতিতে ৪০ থেকে ৫০কেজি বীজ প্রয়োজন।
বীজ বাছাই: কমপক্ষে শতকরা ৮০ভাগ বীজ গজায় এমন গুন সম্পূর্ণ বীজ বাছাই করতে হবে। ১০ লিটার পরিষ্কার পানিতে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে প্রাপ্ত দ্রবণে ২ কেজি বীজ ছেড়ে হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে দিলে পুষ্ট বীজ ডুবে নিচে জমা হবে এবং অপুষ্পক ও হালকা বীজ পানির উপর ভেসে উঠবে। হাত বা চালনি দিয়ে ভাসমান বীজ সরিয়ে নিলেই পানির নিচ থেকে ভালো বীজ পাওয়া যাবে। এ বীজগুলো পরিষ্কার পানিতে তিন থেকে চার বার ধুয়ে নিতে হবে।
বীজ শোধন ও জাক দেওয়া: বীজ শোধনের জন্য হাত সহনীয় তাপমাত্রা ৫২ থেকে ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরম পানিতে ১৫ মিনিট বীজ ডুবিয়ে রাখলে জীবাণুমুক্ত হয়। অথবা প্রতি কেজি ধান বীজ ৩ গ্রাম প প্রোভ্যাকর বাহ হোমাই২ গ্রাম ব্যাভিস্টিন ছত্রাক নাশক মিশিয়ে শোধন করা যায়। বীজ কে রোগ জীবাণু মুক্ত করা ও সুস্থ সবল চারা উৎপাদনের জন্য বীজ শোধন করা হয়। বীজ ভালোভাবে ছত্রাক নাশক মিশিয়ে একটি বদ্ধ পাত্রে ৪৮ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। ড্রাম বা যন্ত্রের শোধন করলে বীজ ও ছত্রাকনাশক মিশিয়ে যন্ত্রের হাতল ঘুরাতে হয়।
শোধন করা বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ডুবিয়ে রেখে ঘরে এক কোনায় বস্তাবন্দি অবস্থায় অথবা কোন বড় মাটির পাত্রে বা ড্রামে জাগ দিয়ে রাখলে ধানের মুখ ফেটে অঙ্কুর বের হয়ে আসে। এ অংকুর বের হওয়ার পর বপনের উপযোগী হতে ৪০ থেকে ৪৮ ঘন্টা সময় লাগবে। এরূপ অঙ্কুরিত বীজ শুধুমাত্র ভেজা কাদাময় জমিতে বপন করা হয়। শুকনা ভিজতলা বা জমিতে বপনের জন্য বীজ জাগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
বীজ বপন সময়: আউশে সরাসরি ছিটিয়ে চাষ করার জন্য এপ্রিল মাস এমন জুলাই আগস্ট ও বোরো নভেম্বর -ডিসেম্বরে বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করতে হয়।
ধানের চারা তৈরির জন্য চার ভাবে বীজ তলা তৈরি করা যায় যথা-(ক) শুকনো,(খ) কাদাময়, ( গ) ভাসমান ও (দাপক বীজতলা)
জমি নির্বাচন: বেলে মাটি ছাড়া প্রায় সব মাটিতেই ধান চাষাবাদ করা যায়। তবে পলি দোআঁশ ও কর্দম দোআঁশ মাটি সব ধরনের ধান চাষের জন্য উত্তম। উঁচু মাঝারি উঁচু জমি আউশ ধানের জন্য উপযোগী, মাঝারি লিচু হতে নিচু জমি যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টির পানি জমে থাকে বা সাপ্লিমেন্ট সেচের সুযোগ আছে সে ধরনের জমি আমন ধানের জন্য উপযোগী। অন্যদিকে নিচু হতে খুব নিচু জমি সেখানে সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাবে এরকম জমি বোরো ধান চাষের জন্য উপযোগী।
জমি তৈরি: চারা রোপনের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে জমিতে পানি আটকানো অবস্থায় আড়াআড়িভাবে ৪থেকে ৫ টি চারা চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল করে ৬/৭ দিন রেখে দিতে হবে । তাতে জমির আগাছা ও আবর্জনা পচে যাবে এবং সার ও মাটিতে ভালোভাবে মিশে যাবে। ধানের জমি উত্তম রূপে চাষ দিয়ে তৈরি করতে হবে। আমন ও বোরো ধানের ক্ষেত্রে জমিতে পানি রেখে ৪/৫ বার আড়াড়ি চাষ ও মই দিলে জমি কাদা হয়ে যায়। প্রথম চাষে আগাছা কাদায় চাপা পড়ে পচে যায়। পরবর্তী চাষগুলোতে জমিতে ভালোভাবে কাদা করে সমতল করতে হয়। জমি উঁচু-নিচু থাকলে আইল দ্বারা ছোট ছোট প্লটে ভাগ করা যেতে পারে। বোনা আউসের ক্ষেত্রে জমিতে জো থাকা অবস্থায় ৪_৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি সমান করে তৈরি করতে হবে।
সারের নাম:
১. ইউরিয়া,
২. টিএসপি,
৩. এমপি,
৪ জিপসাম,
সার প্রয়োগের সাধারণ নীতি:
১. লাল বেলে মাটি ও পাহাড়ের পাদভূমির মাটিতে (পিগমেন্ট )এমপি সারের মাত্রা দেড় গুণ দিতে হবে।
২. হাওর এলাকায় জমি উর্বর হলে সারের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।
৩. হেক্টর প্রতি ৪ -৫ টন শুকনো পচা জৈব সার বা কম্পোস্ট ব্যবহার করলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেওয়া যায়। জৈব সার প্রথম চাষের সময ই জমিতে দিতে হবে।
৪. বেলে বুনটের মাটিতে এমপি সার ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
৫. আগের ফসলে টিএসপি, এমপি, জিপসাম অনুমোদিত মাত্রায় প্রয়োগ করা হয়ে থাকলে পরবর্তী ফসলের জন্য উল্লেখিত সারগুলো অনুমোদিত মাত্রার অর্ধেক হার প্রয়োগ করা যেতে পারে।
৬. জিংক সালফেট যে কোনো একটি ফসলে প্রয়োগ করা হয়ে থাকলে পরবর্তী দুটি ফসলে প্রয়োগ না করলেও চলবে।
৭. ফসল চক্রের প্রথমে খরিফ মৌসুমে যে জমিতে সবুজ সারের চাষ করা হয়েছে সে জমিতে পরের ফসলের ইউরিয়ার পরিমাণ অর্ধেক দিলে চলবে।

Post a Comment